সাকিব হাসান , কলকাতা:
১৯৯৫ সালে “বাংলার নায়ক” নায়ক রিয়াজের অভিষেক ঘটে কিংবদন্তী শাবানা ও জসিমের হাত ধরে। চলচ্চিত্রে রিয়াজের আসাটা চমকপ্রদ বা স্বপ্নের মতোই ব্যাপার ছিল। রিয়াজ ছিলেন আরেক কিংবদন্তী
নায়িকা ববিতার আপন চাচাতো ভাই! এফডিসিতে
ঘুরতে এসে নায়ক জসিম দেখা মাত্রই রিয়াজকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের অফার দেন এমন ভাগ্য কয়জনের জোটে তা বলা বাহুল্য।জসিম,শাবানা,ববিতা এমন কিংবদন্তী শিল্পীরা হয়তো রিয়াজের মাঝে লুকিয়ে থাকা প্রবল প্রতিভা দেখতে পেরেছিলেন বলে খু্ব অল্প সময়ে রিয়াজ সাফল্যের চূড়ায় উঠেন। ৯৫ সালে রিয়াজ আসলেও ৯৭ সালে হৃদয়ের আয়না” ছবির মাধ্যমে তার মূলনায়ক হয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু হয়। প্রথম ছবিতেই আলোর দেখা পান রিয়াজ,একই বছরে
“প্রাণের চেয়ে প্রিয়” ছবিটি সুপারহিটের সুবাদে তাকে বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দেয় এবং এই ছবির হাত ধরে রিয়াজ একে একে করেন বিয়ের ফুল,পৃথিবী তোমার আমার,ভালোবাসি তোমাকে,কাজের মেয়ে,নি:শ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি,বিদ্রোহ চারদিকে, নারীর মন,এবাঁধন যাবেনা ছিড়ের মত সব সুপার ডুপার হিট ছবি। প্রথমত তিনি একদিকে অভিনয় করেছেন নাচে গানে ভরপুর বাণিজ্যিক ছবিতে তেমনি অভিনয় করেন বাস্তবধর্মী বা আর্টফিল্মেও। এখানে তার নায়ক থেকে অভিনেতা হয়ে উঠার মূল ধাপ বা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিয়ের ফুল ভালোবাসি তোমাকে ছবিতে অভিনয়ে রিয়াজ যেমন নায়ক হয়ে উঠেছেন তেমনি “দুই দুয়ারী” ছবিতে অভিনয়ে নায়কের চেয়ে বড় হয়ে উঠেন একজন সুঅভিনেতার পরিচয়ে! সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, রিয়াজ সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য একজন অভিনেতা হয়ে উঠেছিলেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে,”রিয়াজ এমন অভিনেতা যে সর্বমহলের দর্শকের গ্রহণযোগ্য একজন অভিনেতা। বিয়ের ফুল,দুই দুয়ারী ছবিতে অভিনয় করে দুই ধারার দর্শকের কাছে অর্জন করেন ভালোবাসা।
পাশাপাশি দেখা যায় তার অভিনীত বিয়ের ফুল,শ্বশুর বাড়ি জিন্দাবাদ,প্রেমের তাজমহল,মাটির ফুল,মনের মাঝে তুমি ছবিগুলো যখন রিলিজ পায় তখন চলচ্চিত্রে
ছিল অশ্লীলতার ভয়াভহ অবস্থান! রিয়াজের ঐসমস্ত ছবি ছিল সব সুস্থধারা বিনোদনের ছবি যা অশ্লীলতার যুগেও তিনি হয়ে উঠেন আলোর দিশারী হয়ে।
ভিন্ন বা সাহিত্যধারা চলচ্চিত্রে সেরা অভিনেতা: রিয়াজ
ভিন্নধারা বা আর্টফিল্মে সর্বাধিক ছবির অভিনয়কারী অভিনেতা হচ্ছেন রিয়াজ। এই ধারার চলচ্চিত্রে রিয়াজ
নিজেকে অনন্য করেছে যা তাকে অনেক উচুতে নিয়ে
যায়। কিংবদন্তী কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর
হাত ধরে ভিন্নধারা চলচ্চিত্রে রিয়াজের অভিষেক ঘটে
২০০০ সালে “দুই দুয়ারী” ছবির মাধ্যমে প্রথম ছবিতে
রিয়াজের অভিনয় চারদিকে ব্যাপক প্রশংসিত হয় এবং
জাতীয় সেরা অভিনেতার শ্রেষ্ঠ নায়কের পুরুস্কার অর্জন করে নেন। পরবর্তিতে রবি ঠাকুরের শাস্তি,রাবেয়া খাতুনের “মেঘের পরে মেঘ,জহির রায়হানের “হাজার বছর ধরে,সৈয়দ শামছুক হকের “একজন সঙ্গে ছিল,হুমায়ূন আহমেদের দারুচিনি দ্বীপ,সাহিত্যিক ধারার চলচ্চিত্র গুলোতে রিয়াজ অভিনয় করে
সমালেচকসহ সর্বহমলে স্বীকৃতি লাভ করেছেন।
চলচ্চিত্রে জুটির অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক: রিয়াজ
রিয়াজ চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সাথে
অভিনয় করে সফল ও আলোচিত হয়েছেন। তাদের
মধ্যে শাবনুর ও পূর্ণিমার সাথে সফল জুটি গড়ে পেয়েছিলেন অসম্ভব রকমের জনপ্রিয়তা। শাবনুরের
সাথে রিয়াজের জুটি চলচ্চিত্রের সেরা জুটির ইতিহাসে অন্যতম। তারা জুটি হিসাবে ৪৪ টি ছবিতে অভিনয় করেন যার বেশিভাগ হয়েছে সফল ও আলোচিত। এই জুটির বিয়ের ফুল,ভালোবাসি তোমাকে,নারীর মন, কাজের মেয়ে,নি:শ্বাসে তুমি বিশ্বাসে,প্রেমের তাজমহল,
এবাঁধন যাবেনা ছিড়ে,শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ,মাটির ফুল
,ও প্রিয়া তুমি কোথায়,স্বপ্নের বাসর,ভালোবাসা কারে কয়,মোল্লা বাড়ির বউ,এবাদত ছবিগুলো সমাদৃত হয়েছে সিনেমাপ্রেমী মানুষের কাছে! শাবনুরের পরে আরেক জনপ্রিয় নায়িকা পূর্ণিমার সাথেও জুটি গড়ে
সফল হন রিয়াজ। এই জুটিও চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় জুটিগুলোর একটি। তাদের অভিনীত মনের মাঝে তুমি,
হৃদয়ের কথা,শাস্তি,মেঘের পরে মেঘ,টাকা,আকাশ
ছোঁয়া ভালোবাসা ছবিগুলো চলচ্চিত্রের আকাশে জ্বল জ্বল করছে। এছাড়াও মৌসুমী,পপি,শ্রাবন্তী,রাবিনা বিভিন্ন নায়িকাদের সাথে বিভিন্ন সময়ে ছবি করে নিজেকে সফল ও আলোচনার তুঙ্গে রাখেন এই নায়ক।
নাটক ও বিজ্ঞাপনে উজ্জ্বল: রিয়াজ
রিয়াজ নাটক ও বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে যে সফলতা পেয়েছেন সেটি তার সময়ের অন্য কোন চলচ্চিত্র তারকা করে দেখাতে পারেনি। নাটকে কাজ করার অন্যতম কারন ছিল হুমায়ূন আহমেদ। হুমায়ূন আহমেদের নির্দেশনায় রিয়াজ এমন কিছু কালজয়ী নাটক করেছেন যা তাকে বরণ্য করে রাখবে যেমন: উড়ে যায় বকপক্ষী,জোছনার ফুল,চৈত্রদনের গান,বর্ষার প্রথমদিনের কদমফুল,রহস্য,এই বর্ষায়,বুয়া বিলাস,ওরা তিনজন,নয়া রিক্সা ইত্যাদি।
হুমায়ূন আহমেদের নাটকের বাইরেও রিয়াজের উল্লেখযোগ্য নাটক হচ্ছে অগ্নীবলাকা,মনের মধ্যে আকাশ,ও গো বধূ সুন্দরী,কুঁড়িয়ে পাওয়া সুখ,তুলিতে আঁকা স্বপ্ন,কইন্যা,সইজারল্যান্ড, কলুর বলদ সহ আরো অনেক নাটক। নাটকের পাশাপাশি রিয়াজ বিজ্ঞাপনে ও কাজ করেছেন যার প্রতিটি পেয়েছিল জনপ্রিয়তা। ড্যানিশ কনডেন্স মিল্ক বিজ্ঞাপনটি রিয়াজকে যেকোন একটি জনপ্রিয় ছবির চেয়েও বেশি জনপ্রিয় করে রেখেছে, ঝিলিক ছড়ায় পূর্ণিমা টিভিসির এই জিঙ্গেল টি আমরা একসময় গুনগুন করে গাইতাম বার্গারের এই বিজ্ঞাপনটিও দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়ে আছে এছাড়াও ইউরো কোলা,ইউরো লেমন,নাসির সানগ্লাস এর বিজ্ঞাপন গুলোও বিখ্যাত বিজ্ঞাপন জগতের ইতিহাসে।
পুরুস্কার ও সম্মান পাপ্তিতে সেরা: রিয়াজ
রিয়াজ ৩ বার জাতীয় পুরুস্কার পাওয়া একজন অভিনেতা সাথে ৭বার মেলির পুরুস্কার অর্জন করেন! এর বাইরে চলচ্চিত্রের অনেক পুরুস্কারে তার হাতে উঠেছে। তবে রিয়াজের বিশেষ আরেকটি সম্মান প্রাপ্তি হচ্ছে জুরিবোর্ডের সদস্য লাভ। এটি বড় একটি সম্মানের বলা যায় কারণ তার সময়ে এত অল্প সময়ে কোন তারকায় এমন সম্মান পাননি যা রিয়াজ পেয়েছেন।
এই বছরও জুরিবোর্ডে থাকছেন যা টানা দ্বিতীয়বারের মত।
রিয়াজ জীবনের ৪৯ টি বছর পার করলেন কিন্তু
তার ভক্তশ্রেণীর মাঝে এখনো সে লাভার বয় চিরসবুজ হয়ে আছেন, এখনো রিয়াজ আমাদের কাছে স্বপ্নের পুরুষ যাকে শৈশব থেকেই ভালোবেসে আসছি।
জন্মদিনে অফুরান্ত শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
শুভ জন্মদিন প্রিয় নায়ক ও অভিনেতা। ভালো থাকবেন।